সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর-ভাষণ
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
সম্মানিত সভাপতি, আমন্ত্রিত আলােচকবৃন্দ ও সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের আলােচনায় অংশ নিতে পেরে আমি গর্ববােধ করছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বর্তমানে আমাদের দেশে একটি ভয়াবহ জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দেশে কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কোনাে গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সারাদেশ জুড়ে এর সহিংস বিস্তার ঘটেছে। সরকারি অফিস, শিল্প-কারখানা,
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান,
শিক্ষাঙ্গন, ব্যক্তিজীবন, রেস্তোরা কিছুই আজ
সন্ত্রাসী থাবা
থেকে মুক্ত
নয়। সন্ত্রাসীদের
নির্বিচার অস্ত্রের
আঘাত থেকে
মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ
ব্যবসায়ী, বিত্তবান শিল্পপতি, কৃতী অধ্যাপক,
লেখক, ব্লগার,
বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মন্ত্রী, এমপি এমনকি
বিদেশি রাষ্ট্রদূত
পর্যন্ত কেউই
রেহাই পাচ্ছে
না। বােমাবাজির
মতাে ভয়াবহ
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে
মুহুর্তের মধ্যে ছিনিয়ে
নিচ্ছে শত
শত মানুষের
অমূল্য জীবন,
ভেঙে দিচ্ছে
তাদের সাজানাে
সংসার। চারদিকে
জঙ্গি ও
সন্ত্রাসী তৎপরতা এমনভাবে
অক্টোপাসের মতাে
আকড়ে ধরেছে
যে ঘর
থেকে বের
হয়ে ঘরে
ফেরা নিশ্চয়তা
কারাের নেই।
মানুষ আজ
সন্ত্রাসীদের হাতে
জিম্মি হয়ে
পড়েছে। সন্ত্রাসের নগ্ন
ছােবল থেকে
আজ আর
কেউই নিরাপদ
নয়। এ
কারণে আজ
সর্বমহল থেকে
দাবি উঠেছে,
সন্ত্রাস ও
জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ
চাই।
সুধীবৃন্দ
আপনারা অবগত
আছেন যে,
সন্ত্রাস সম্প্রতি
জঙ্গিবাদ নাম
নিয়ে নতুন
মাত্রা যােগ
করেছে। সহিংস
সন্ত্রাসের সঙ্গে
যুক্ত হয়েছে।
বােমাবাজি, গ্রেনেড হামলা ও আত্মঘাতী
বােমাবাজি। এই
তাে কিছুদিন
আগে পর্যন্ত
অমরা সন্ত্রাসী
শব্দটা ব্যবহার
করে আসছি ছিচকে
ছিনতাইকারী, পটকা
ফোটানােওয়ালা, বড়ােজোর দাগি খুনি-চাদাবাজদের
বােঝাতে। কিন্তু
আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসবাদ
বা জঙ্গিবাদ
বলতে যা
বােঝায়। তার
কোনাে অস্তিত্ব
এদেশে ছিল
না। এমনকি
যখন উদীচীর
সম্মেলনে কিংবা
ছায়ানটের
আসরে বােমা
পড়ল, তখনাে
এটাকে একটা
বিচ্ছিন্ন তৎপরতা বলেই
অনেকে হালকাভাবে
নিতে চেয়েছিল।
কিন্তু যখন
বােমা পড়েছে
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের
ওপর, বােমা
পড়েছে জাতীয়
নেতৃবৃন্দের ওপরে,
মাজার, সিনেমা
হল, গির্জা,
আহমদিয় মসজিদ,
গুলশান হােলি
আর্টিজান রেস্তোরায়,
র্যাবের ক্যাম্পে,
আতিয়া মহলে,
তখন আমরা
কিছুটা সচেতন
হয়েছি। বুঝতে
পেরেছি আমরা
ঢুকে পড়েছি
সন্ত্রাসবাদের সর্বনাশা
অগ্নিগােলকের ভেতরে।
যার ফলে
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি
ডিরেক্টর এদেশ
ছেড়ে গেছেন।
আর অনেক
সম্ভাব্য বিনিয়ােগকারী
এদেশে আসাই
বন্ধ করে
দিচ্ছে।
সম্মানিত সুধী
বাংলাদেশ একটি
উন্নয়নশীল দেশ।
এদেশে সন্ত্রাস
ও জঙ্গিবাদ
যেভাবে বেড়ে
যাচ্ছে এতে
করে দেশের
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার
দিকে ধাবিত
হচ্ছে। এ
থেকে পরিত্রাণ
পাওয়ার সঠিক
পথ খুঁজে
বের করতে
হবে। ঠিক করতে
হবে সন্ত্রাস
নির্মূলের উপায়। সন্ত্রাসের উৎস ও
বিস্তারের কারণ
সম্পর্কে গভীরভাবে
গবেষণা করে
প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে
হবে এখনই।
দলমত নির্বিশেষে
রাজনীতিমুক্ত মন
নিয়ে সন্ত্রাস
ও জঙ্গিবাদ
দমনে সবাইকে
ঐক্যবদ্ধ হতে
হবে। মনে
রাখতে হবে
ব্যক্তির চেয়ে
দল বড়াে,
দলের চেয়ে
দেশ বড়াে।
আর সন্ত্রাস
ও জঙ্গিবাদ
দমনে পরিবার
থেকেই প্রথম
পদক্ষেপ নিতে
হবে। মা-বাবাকে তাদের
সন্তানের প্রতি
সতর্ক দৃষ্টি
রাখতে হবে।
সন্তান কোথায়
যাচ্ছে, কী
করছে, কাদের
সঙ্গে মিশছে
সবকিছুর প্রতি
সতর্ক দৃষ্টি
রাখতে হবে।
তাছাড়া ছােটোবেলা
থেকে সন্তানকে
নৈতিক ও
মানবিক শিক্ষায়
শিক্ষিত করে
তুলতে হবে।
সন্তানকে সময়
দিতে হবে
এবং তাদের
বিকাশের জন্য
উপযুক্ত পরিবেশ
তৈরি করতে
হবে। তবেই
সন্তান বিপদগামী
হবে না।
সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে আরও
সক্রিয় করে
গড়ে তুলতে
হবে, যাতে
সমাজে সন্ত্রাস
ও জঙ্গিবাদের
বিস্তার ঘটতে
না পারে।
প্রিয় সুধী
তাই আসুন আমরা একটা স্বপ্ন দেখি। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আমরাও হব পথিবীর এক সেরা দেশ। যে দেশে থাকবে না সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনাে চিহ্ন। যেদিন আমরা সত্যিকারে গর্ব করে গাইতে পারব : সকল দেশে সেরা সে যে আমার জন্মভূমি। ধন্যবাদ সবাইকে।
Share This Post
Post Comments (0)